ঢাকা, ০৬ মে সোমবার, ২০২৪ || ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৭৮৯

নকশী কাঁথার নকশায় ডিজিটাল ছোঁয়া 

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪৭ ১৬ জানুয়ারি ২০২১  

রঙিন কাপড়ের পরতে পরতে সুনিপুণ হাতের কাজে একেকটি নকশী কাঁথা ফুটে ওঠে। তবে নাটোরের বাগাতিপাড়ার যোগিপাড়া গ্রামের শাহনাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে অল্প সময়েই তৈরি করছেন এসব। অবসরে সংসার ও পড়াশোনার ফাঁকে এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। পুঁজির যোগান পেতে প্রতিবেশী ও আত্মীয় থেকে ঋণ সহায়তা নেয়ায় সীমিত পরিসরে চলছে তার এই কাজ। তাই আত্মনির্ভরশীল এই নারীকে সহজ শর্তে ঋণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।


রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের ব্লক বাটিকের দোকানে ডাইস দেখে নকশী কাঁথা তৈরিতে আগ্রহর সৃষ্টি হয় শাহনাজেতার। মাত্র ১৭০০ টাকা পুঁজি দিয়ে ২০১৯  সালে পুরাতন কাপড়, সুঁই আর সুতা কিনে তা তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে চাহিদা নিয়ে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় প্রতিদিন নকশী কাঁথায় ফুলের ছাপ এবং সেলাই এ কর্মব্যস্ততা বেড়েছে তার।


কখনো লাল, কখনো সাদা কাঁথার জমিনের ওপর রঙিন সুতোতে ফুটিয়ে তোলা হয় সূক্ষ্ম নকশা। সুঁই- সুতোর এফোঁড়-ওফোঁড়ে এক একটি নকশী কাঁথা যেন ফুটে ওঠে জীবন্ত প্রতিচ্ছবিতে। মজুরির ওপর নির্ভর করে নান্দনিক এসব কাঁথা সেলাই মেশিনে তৈরিতে সময় লাগে সপ্তাহ খানেক। সংসারের কাজ ও পড়া শোনার ফাঁকে বাড়তি আয় তাকে করেছে স্বনির্ভর। সেই সঙ্গে হয়েছে ভাগ্যেরও বদল। 


এখন শাহনাজ বাড়িতে বসেই এই কাঁথার অর্ডার পান। কাঁথা বিক্রি করেই এখন তার মাসে পাঁচ থেকে সাত  হাজার টাকা আয় হয়। একদিন সমাজে মাথা নিচু করে থাকতে হতো, দিন কাটতো অনাহারে। নকশী কাঁথার টাকা ওর উন্নয়নের চাবিকাঠি। 

 

এখন সবাই ডেকে কথা বলে, সমাদর করে, প্রশংসা করে শাহনাজের কাজের। অবসরে এই কাঁথা তৈরিতে গ্রামের অন্যান্য নারীরা ধীরে ধীরে কাজ শিখতে ছুটে আসছে। তিনি দাবি করেন, মফস্বল এলাকা হওয়ায় পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি ও কাজের অর্ডার অনেক কম। ইতিপূর্বে প্রচার না হওয়ায় আমার এ কাজের তেমন প্রসার ঘটেনি। ফলে কাজ করে যে টাকা পাই সেটা খুব বেশি না। সরকারি সহযোগিতা নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারলে নিজের কাজের পরিধি বাড়বে। পাশাপাশি এলাকার আরও অনেকের মেশিনে  কাঁথা  তৈরি ও ছাপ দেওয়া কাজের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

 

সম্প্রতি শাহনাজকে নকশী কাঁথা তৈরির অর্ডার দিতে আসে হাপসা খাতুন। এই কাজের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেলাই মেশিনে তৈরি কাঁথার কদর বাড়ছে। এই নকশী কাঁথা বাংলাদেশকে আলাদাভাবে পরিচিত এনে দেবে বিশ্বে।


শাহনাজকে সাধুবাদ জানিয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিরিন আখতার বলেন, যদি বাণিজ্যিকভাবে  ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে এসব নকশী কাঁথা তৈরি করা যায়, তাহলে তৃণমূল পর্যায়ের নারী কারিগরদের সরকারি সেবার আওতায় আনাসহ উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও আশ্বাস দেন তিনি।


সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় এনে তাকে যদি আমরা বৃহৎ পরিসরে কাজ করাতে পারি, তবে সে উপজেলার ব্র্যান্ডিং হতে পারে।

সাকসেস স্টোরি বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর